গুল্মটির গল্প
তোমার ধূসর কল্পতরু বেয়ে
আমার চারুলতা
আর মেঘ ছোয়ার স্বপ্ন দেখবেনা,
কথা দিয়েছিলাম।
বৃষ্টি জল কি তা জানতো?
সে তো তোমায় নাইয়ে
আমার কড়িতেই জমে।
আমি সেই গুল্মটি নই আর।
সেদিনের পর, ঠিকানা বদলেছি।
ঘোড়ার আড়াই ঘর দূরে,
শ্বাসমূল হয়ে সটান দাড়িয়েছি।
তবু নির্যাসে তোমার বৃদ্ধ
কাচাপাকা শেকড়ের ঘ্রাণ।
এখনো জিওল মাছের মত
জিইয়ে রাখি সব
আশে আশে।
বিভাজিত আমি
তিন দশক দেখলাম তোমাদের মুখের ভেতর মুখোশ
চোখের আচড়ে ছিন্নবস্ত্র কর প্রিয়জনের হৃদয়
আর ফ্রেমে কোলাজে প্রেমের রঙিন রেখাচিত্রে
সুগন্ধ ছড়াও ভার্চুয়াল জগতে।
বিভাজিত আমি এখন,
নিজেকে টুকরো করি হাসতে হাসতে
আর জোড়া লাগাতে কখনো রাত হয় ভোর।
অর্ধবেলা আঁকি নিজের উজ্জ্বল পটচিত্র
কি গৌরব সেই সুদর্শনার।
বেলাশেষে এক ছায়াহীন মায়াহীন কায়া,
আয়না দেখতে যে ভয় পায়
চেনা সুরে গাইতেও তাল কাটে যার,
অস্তিত্ব পল্কা কাঁচের চুরির মত
ভেসে গেছে জাদুকাটা নদীর জোয়ারে
কোন হেমন্তের শিমুলবাগানের
স্বপ্ন দেখতে দেখতে।
ভাঙ্গনের আখ্যান
যে ভাঙন ছিল অনিবার্য
তার ফাটলের কারুকাজ দেখে
ভয় পেয়েছিলে তুমি?
কেন অশ্রুসিক্ত করলে
ঊষর সেই ভূমি?
জন্মেছিল কি কোন স্বাধীন গুল্ম-লতা?
বৃথাই ছিল ভয় আশংকা
ক্ষুদ্র হবার বা হারিয়ে যাবার।
ভাঙন কি শুধুই বেদনা বা পরিহাসের?
তা কি শক্তির উদগীরণ নয়?
যার বীজ হয়তো তোমার গভীরে।
পাপের চক্র
লিকলিকে কৃমির মতো
তোমাদের শরীরে জন্মে পাপ,
ছেঁয়ে যায় চোখে মুখে
তার অদৃশ্য দগদগে ঘা,
জন্মায় না পাপবোধ, অনুশোচনা।
ধর্মের নামে পোশাকী আচারসর্বস্বতার
চৌবাচ্চা ডুব দিয়ে উঠে আবার
নকল ট্যাগ বসাও হালাল হারামের
সুবিধাবাদী সংজ্ঞায়নে।
আড়ালের আবডালের সকল পাপ
নিজেরি জ্ঞানে গুনে কর ক্ষমা।
শুরু হয় অনাচারের আরেক সেতুর গোড়াপত্তন।
সাধুবাদ তোমাদের নামসর্বস্ব সাধুতায়।
প্রশ্ন
প্রেমিক নয়,
ধোঁকাবাজের হৃদয় খুঁড়ে দেখতে চাই
কতগুলো লাশ জমানো সেই বদ্ধভূমিতে?
কোন সংবিধান তাকে ক্ষমতা দিল
হৃদয় ভাঙার আইন নিজ হাতে তুলে নিতে?
বিচারের বাণী কাঁদে নিভৃতে
নুসরাত চলে গেল,
যাবারই কথা ছিল।
পর্দানশীল?
তাতে কি?
শরীর তো নারীর।
মুখোশধারী জন্তুর
লালসার শিকার।
আর প্রতিবাদের প্রত্যুত্তর
ঝলসে দিল পুরোটাই
ছাই হলো মানবতা
ধূমায়িত বিবেক।
এমনি গিয়েছিল তনু
রয়েছিল মানুষরূপী শকুনের
খুবলে খাওয়া লাশ।
তীব্র সেই আর্ত্ননাদ
ব্যারিকেডে প্রতিধ্বনি
ফিরে আসে নি।
কবরের ফুসে ওঠা মাটি
সমান হয়ে যায়
তারও আগে আগে মিশে সমান
আমাদের প্রতিবাদ
আরেক শিরোনামের চাপাতলে।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জাফরিন লিয়া
সিনিয়ার লেকচারার, ইংরেজি বিভাগ,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।